দিনাজপুরে পাওয়া গেছে মাংসাশী উদ্ভিদ

প্রকাশঃ জানুয়ারি ২৪, ২০১৯ সময়ঃ ১২:৪১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:৪১ অপরাহ্ণ

দিনাজপুরে বিরল প্রজাতির মাংসাশী (পতঙ্গভুক) উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি দিনাজপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে সংরক্ষিত পুকুরপাড়ের পশ্চিম পাড়ে ‘সূর্যশিশির’নামে এই উদ্ভিদের সন্ধান পান উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের এমএসসি (শেষ বর্ষ) শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক হোসেন ও তার বন্ধুরা।

মাংসখেকো এই উদ্ভিদের খবর পাওয়ার পর বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ উৎসুক জনতা এক নজর দেখতে ভিড় করছেন। এই উদ্ভিদ প্রজাতিটি শনাক্ত করেছেন কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। ইতমধ্যে সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য তিনটি উদ্ভিদের মধ্যে দুটি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে রাখা হয়েছে।

সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন জানান, গোলাকার সবুজ থেকে লালচে রঙের থ্যালাসের মতো মাটিতে লেপ্টে থাকা উদ্ভিদটি মাংসাশী উদ্ভিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রজাতি। এই উদ্ভিদটির রয়েছে ঔষধি গুণ। পোকা-মাকড় ও কীটপতঙ্গ খেলেও উপকারী পোকা বা কীটপতঙ্গ এই উদ্ভিদের প্রতি আকৃষ্ট হয় না। অম্ল (গ্যাস) বেড়ে যাওয়া মাটিতে শীতপ্রবণ এলাকায় এরা জন্মায়। যে মাটিতে সূর্যশিশির জন্ম নেয় সেই মাটির পুষ্টিগুণ কম থাকে।

এদিকে দিনাজপুরের মাটিতে অম্লতা (গ্যাস) বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুর মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মামুন আল আহসান চৌধুরী।

তিনি জানান, মাটির পুষ্টিগুণ উর্বরতা ঠিক থাকার জন্য যে ১৬টি খাদ্য উপাদান প্রয়োজন হয় এর মধ্যে ৯টি উপাদানের ঘাটতি আছে দিনাজপুরের মাটিতে। ফলে অম্ল (গ্যাস) বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে দিনাজপুর জেলা মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন আরো জানান, ৪-৫ সেন্টিমিটার ব্যাসবিশিষ্ট গোলাকার থ্যালাস সদৃশ উদ্ভিদটির মধ্য থেকে একটি লাল বর্ণের ২-৩ ইঞ্চি লম্বা পুষ্পমঞ্জরি হয়। সংখ্যায় ১৫-২০টি তিন থেকে চার স্তরের পাতা সদৃশ মাংসাল দেহের চারদিকে পিন আকৃতির কাঁটা থাকে। মাংসাল দেহের মধ্যভাগ অনেকটা চামচের মতো ঢালু। পাতাগুলো মিউসিলেজ সাবস্টেন্স নামক এক প্রকার এনজাইম নির্গত করে। এনজাইমে পোকা পড়লে আঠার মতো আটকে রাখে। তখন গাছ সেটি শুষে নেয়। শীতের সকালে পড়া শিশিরে চকচক করে উদ্ভিদটি, ফলে পোকারা আকৃষ্ট হয়। পোকামাকড় উদ্ভিদটিতে পড়লে এনজাইমের আঠার মাঝে আটকে যায়।

উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক জাহিদুর রহমান জানান, উদ্ভিদটি এবারই প্রথম নয়, প্রথমবার ক্যাম্পাসে শনাক্ত করা হয় ১৯৯৭ সালে। তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান বিশিষ্ট উদ্ভিদবিদ রজব আলী মোল্লা এটি শনাক্ত করেন। উপযোগী পরিবেশের বিরূপ প্রভাবের কারণে উদ্ভিদটি এখন বিলুপ্তপ্রায়।

বাংলায় বলা হয় সূর্যশিশির (মাংসাশী উদ্ভিদ), ইংরেজি নাম Sundews Plant, সংস্কৃতির ভাষায় দেবাবিন্দু, যার আরেক নাম মুখাজালি, বৈজ্ঞানিক নাম- Drosera Rotundifolia। এটি Carzophzllales বর্গ ও Droseraceae গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। জন্মায় অম্লতা (গ্যাস) বেড়ে যাওয়া মাটিতে শীতপ্রবণ এলাকায়। যে মাটিতে সূর্যশিশির জন্ম নেয় সেই মাটির পুষ্টিগুণ কম থাকে। আর তারই নমুনা দিনাজপুরের মাটিতে জন্ম নেয়া বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ ‘সূর্যশিশির’।

প্রতি /এডি/রন

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G